সোমবার, ৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,২৪শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ,বিকাল ৩:৫৯ মিনিট

Entertainment Unlimited

আমির খান

বলিউডের অন্যতম প্রভাবশালী এবং জনপ্রিয় তারকা আমির খান তার অভিনয়, প্রযোজনা এবং পরিচালনার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দর্শকদের মন জয় করেছেন। তিনি শুধুমাত্র একজন অভিনেতা নন, বরং একজন সফল উদ্যোক্তা এবং সমাজসেবীও। তার এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অসংখ্য ব্লকবাস্টার সিনেমা উপহার দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ‘লগান’, ‘দঙ্গল’, ‘পিকে’ এবং ‘তারে জমিন পর’-এর মতো চলচ্চিত্র। এই সাফল্যের সঙ্গে তিনি প্রায় ১৮৬২ কোটি টাকার বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তবে প্রশ্ন উঠছে, এই বিপুল সম্পদ ভবিষ্যতে কীভাবে বণ্টন হবে? এই লেখায় আমরা আমির খানের সম্পত্তির বিবরণ, তার ব্যক্তিগত জীবন এবং সম্পত্তি বণ্টনের সম্ভাব্য দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

আমির খানের সম্পত্তির উৎস ও বিবরণ

আমির খানের সম্পত্তির পরিমাণ শুনলে যে কেউ অবাক হতে বাধ্য। তার আয়ের প্রধান উৎস হলো চলচ্চিত্র শিল্প। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি প্রযোজক হিসেবে ‘আমির খান প্রোডাকশনস’ নামে নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি সফল চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। এছাড়া বিজ্ঞাপন, ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট এবং বিনিয়োগও তার সম্পদ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তার সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি, জমি, গাড়ি এবং অন্যান্য বিনিয়োগ। নিচে তার কিছু উল্লেখযোগ্য সম্পদের বিবরণ দেওয়া হলো।

১. ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসে বিলাসবহুল বাড়ি

আমির খানের বিদেশি সম্পত্তির মধ্যে অন্যতম হলো ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসে অবস্থিত তার বাড়ি। এই অঞ্চলটি বিশ্বের সবচেয়ে অভিজাত এলাকাগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ এই বাড়ির বাজারমূল্য প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। এটি তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রার একটি প্রতীক।

২. মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় সমুদ্রতীরবর্তী বাড়ি

মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় আমিরের একটি অত্যাধুনিক বাড়ি রয়েছে, যা সমুদ্রের তীরে অবস্থিত। প্রায় ৫,০০০ বর্গফুটের এই দোতলা বাড়িতে তার প্রযোজনা সংস্থার অফিসও রয়েছে। এই বাড়ির মূল্য ধরা হয় ৬০ কোটি টাকা। এটি তার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৩. পঞ্চগনির বাগানবাড়ি

প্রকৃতির মাঝে শান্তি খুঁজতে আমির মহারাষ্ট্রের পঞ্চগনিতে একটি বাগানবাড়ি কিনেছেন। ২ একর জমির ওপর নির্মিত এই বাড়ির মূল্য প্রায় ৭ কোটি টাকা। শহরের ব্যস্ততা থেকে দূরে এই বাড়িতে তিনি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান।

৪. বিলাসবহুল গাড়ির সংগ্রহ

আমির খান

আমিরের গাড়ি সংগ্রহও তার সম্পদের একটি বড় অংশ। তার কাছে রয়েছে:

  • মার্সিডিজ বেঞ্জ এস৬০০ গার্ড: এই বুলেটপ্রুফ গাড়ির মূল্য প্রায় ১০.৫০ কোটি টাকা।
  • রোলস-রয়েস ঘোস্ট: বিলাসিতার প্রতীক এই গাড়ির দাম ৬.৯৫ থেকে ৭.৯৫ কোটি টাকার মধ্যে।

এছাড়াও তার আরও বেশ কিছু গাড়ি এবং সম্পত্তি রয়েছে, যা তার মোট সম্পদের পরিমাণকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আমির খানের ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক সম্পর্ক

আমির খানের ব্যক্তিগত জীবনও তার সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি দুইবার বিয়ে করেছেন এবং তার দুই স্ত্রীর সঙ্গে সন্তান রয়েছে।

  • প্রথম স্ত্রী রিনা দত্ত: আমির ১৯৮৬ সালে রিনা দত্তকে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান—জুনায়েদ খান এবং ইরা খান। ২০০২ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়, তবে তারা সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
  • দ্বিতীয় স্ত্রী কিরণ রাও: ২০০৫ সালে আমির কিরণ রাওকে বিয়ে করেন। তাদের একটি সন্তান, আজাদ রাও খান, যিনি ২০১১ সালে সারোগেসির মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেন। ২০২১ সালে তাদের বিচ্ছেদ হলেও তারা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে রয়েছেন এবং যৌথভাবে প্রযোজনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বর্তমানে আমিরের নাম বেঙ্গালুরুর গৌরী স্প্র্যাটের সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জনে জড়িয়েছে, যদিও এটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হয়নি।

সম্পত্তি বণ্টনের সম্ভাব্য দিক

আমির খান এখনো তার সম্পত্তি বণ্টনের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। তবে তার ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক সম্পর্ক এবং সমাজসেবার প্রতি তার ঝোঁক বিবেচনা করে কিছু সম্ভাবনা ধরা যায়।

১. সন্তানদের মধ্যে বণ্টন

আমিরের তিন সন্তান—জুনায়েদ, ইরা এবং আজাদ। সাধারণত তারকারা তাদের সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে ভাগ করে দেন। জুনায়েদ ইতিমধ্যে চলচ্চিত্র শিল্পে পা রেখেছেন এবং আমিরের প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে জড়িত। ইরা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন এবং আজাদ এখনো শিশু। সম্ভবত আমির তার সম্পত্তির একটি বড় অংশ এই তিন সন্তানের জন্য রেখে যেতে পারেন।

২. প্রাক্তন স্ত্রীদের অংশ

রিনা দত্ত এবং কিরণ রাওয়ের সঙ্গে আমিরের সুসম্পর্ক রয়েছে। বিচ্ছেদের সময় আর্থিক বন্দোবস্ত হয়ে থাকলেও, তিনি তাদের জন্য কিছু সম্পত্তি বা আর্থিক সুবিধা রেখে যেতে পারেন। বিশেষ করে কিরণের সঙ্গে তার পেশাগত সহযোগিতা বিবেচনায় এটি সম্ভব।

৩. সমাজসেবা ও দান

আমির খান তার সমাজসেবামূলক কাজের জন্য পরিচিত। তিনি ‘পানি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা মহারাষ্ট্রে জলসংরক্ষণের কাজ করে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। তার সম্পত্তির একটি অংশ সমাজসেবার জন্য দান করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

৪. আইনি উইল ও ট্রাস্ট

আমিরের মতো বড় তারকারা সাধারণত তাদের সম্পত্তি বণ্টনের জন্য উইল বা ট্রাস্ট তৈরি করেন। এটি তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিতে পারে এবং ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা এড়াতে সাহায্য করবে।

সম্পত্তি বণ্টনে ভারতীয় আইনের প্রভাব

ভারতীয় আইনে সম্পত্তি বণ্টন ব্যক্তিগত ধর্মীয় আইনের ওপর নির্ভর করে। আমির খান মুসলিম হওয়ায় তার সম্পত্তি বণ্টনে মুসলিম পার্সোনাল ল’ প্রযোজ্য হতে পারে, যদি না তিনি আলাদা উইল তৈরি করেন। এই আইন অনুযায়ী, সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ স্ত্রী, সন্তান এবং অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভাগ হয়। তবে উইলের মাধ্যমে তিনি তার ইচ্ছানুযায়ী সম্পত্তি বণ্টনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

উপসংহার

আমির খানের ১৮৬২ কোটি টাকার সম্পত্তি তার কঠোর পরিশ্রম, প্রতিভা এবং ব্যবসায়িক দূরদর্শিতার ফসল। এই বিশাল সম্পদ ভবিষ্যতে কীভাবে বণ্টন হবে, তা নির্ভর করবে তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, পারিবারিক সম্পর্ক এবং সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতার ওপর। তার সন্তান, প্রাক্তন স্ত্রী এবং সমাজসেবা—এই তিনটি ক্ষেত্রই সম্ভবত তার সম্পত্তির প্রধান দাবিদার হবে। তবে শেষ পর্যন্ত সময়ই বলে দেবে আমির খানের এই বিপুল সম্পদের ভাগ্য কী হবে।

NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।