বাংলা লোকসংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র, একুশে পদকপ্রাপ্ত লালন কন্যা ফরিদা পারভীন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত ৫ জুলাই তাঁকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কিডনি জটিলতা, শ্বাসকষ্টসহ একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগতে থাকা এই বরেণ্য শিল্পীর শারীরিক খবরে দেশজুড়ে সংগীতপ্রেমীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এমন এক সংকটময় সময়ে তাঁর খোঁজ নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
👉 খোঁজ নিতে হাসপাতালে দলীয় প্রতিনিধি
সূত্র অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাতে ফরিদা পারভীনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স-কে সরাসরি হাসপাতালে পাঠিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বর্তমানে রাজধানীর আয়শা মেমোরিয়াল হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে বিএনপির প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে,
“ফরিদা পারভীনের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। একইসঙ্গে তিনি এই বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।”
🎤 শিল্পীর স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ফরিদা পারভীনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। পরে কিছুটা সুস্থ হলে তাঁকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। স্বজনরা জানিয়েছেন,
“ফরিদা আপা এখন অনেকটাই ভালো আছেন। চিকিৎসকেরা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তবে বয়স ও আগের কিছু জটিলতার কারণে তাঁকে নিয়ে এখনও শঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি।”
🪕 এক নজরে ফরিদা পারভীনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়
- ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারে নজরুলসংগীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু সংগীতজীবনের।
- ১৯৭৩ সালে দেশাত্মবোধক গানে জনপ্রিয়তা লাভ।
- সাধক মোকসেদ আলী শাহ-এর কাছে দীর্ঘদিন তালিম নিয়ে লালনসংগীত-এ পারদর্শিতা অর্জন করেন।
- ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক লাভ।
- ২০০৮ সালে জাপানের পক্ষ থেকে পান ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার পুরস্কার।
- ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা প্লেব্যাক গায়িকা হন।
💬 সামাজিক মাধ্যমে উদ্বেগ-ভালোবাসার বন্যা
ফরিদা পারভীনের অসুস্থতার খবরে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই তাঁর গাওয়া গান শেয়ার করে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানিয়েছেন। অনেকেই সরকারের কাছে তাঁর উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন।
একজন ভক্ত লেখেন:
“যে কণ্ঠ আমাদের জাতিসত্ত্বার ভেতরকার সুরকে জাগিয়ে তোলে, সেই শিল্পীর সুস্থতা যেন দ্রুত ফিরে আসে—এই কামনা করি।”
🏥 উন্নত চিকিৎসায় কি উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার?
বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে ফরিদা পারভীনের চিকিৎসায় বিশেষ বরাদ্দ ও উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়।
এ বিষয়ে এখনো সরকারি পর্যায়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি, তবে সূত্র বলছে, বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা চলছে।
🤝 রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে মানবিক বার্তা
বেগম খালেদা জিয়ার এই উদ্যোগ রাজনীতির বাইরে একটি মানবিক বার্তা দিয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন বিভক্তির চরমে দেশ, তখন একজন সাংস্কৃতিক কর্মীর খোঁজ নিতে রাজনৈতিক নেতা এগিয়ে আসা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
📢 ফরিদা পারভীনকে নিয়ে দেশের প্রত্যাশা
ফরিদা পারভীন শুধু একজন সংগীতশিল্পী নন, তিনি বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি, বাউল ও লালন ভাবনার জীবন্ত প্রতীক। তাঁর কণ্ঠে ভেসে এসেছে—
“তোমার বানাইলো কে রে মন…”
এই ধরণের গান আজও বাংলার মাটি ও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছে।
তাই তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনায় এখন পুরো জাতি একত্রিত।
🔚 উপসংহার
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গর্ব ফরিদা পারভীনের অসুস্থতা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, শিল্পীরা জাতির অমূল্য সম্পদ। তাঁদের সুস্থতা, সুরক্ষা এবং সম্মানের দায়িত্ব আমাদের সবার।
বেগম খালেদা জিয়ার এই উদ্যোগ আশার আলো দেখিয়েছে। এখন প্রয়োজন সামগ্রিকভাবে—রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে—এই শিল্পীর পাশে দাঁড়ানো।
📌 আপনার মন্তব্য জানান
আপনি কী মনে করেন? বরেণ্য শিল্পীদের চিকিৎসা ও সুরক্ষায় সরকারের কী আরও দায়িত্ব নেওয়া উচিত? নিচে কমেন্ট করে জানান আপনার মতামত।