NG Videos News

Entertainment Unlimited

শুক্রবার ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

NG Videos News

Entertainment Unlimited

শুক্রবার ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
হুমায়রা -হুমায়রা

পাকিস্তানের শোবিজ দুনিয়া কাঁপিয়ে দিল এক ভয়ংকর ঘটনা

পাকিস্তানের বিনোদন অঙ্গনে নেমে এসেছে নীরব এক শোকের ছায়া। ৯ মাস ধরে ফ্ল্যাটে পচে থাকা একাকী জীবনের করুণ পরিণতি যেন প্রকাশ করল বর্তমান সমাজের এক নির্মম বাস্তবতা। পাকিস্তানি অভিনেত্রী ও মডেল হুমায়রা আসগর আলিকে ঘিরে এক ভয়ংকর কাহিনির পর্দা উঠেছে, যা শুধু তার মৃত্যু নয়, বরং আমাদের সমাজব্যবস্থার হৃদয়হীন চিত্রকেই সামনে এনেছে।

করাচির অ্যাপার্টমেন্টে মিলল পচাগলা মরদেহ

২০২৫ সালের ৯ জুলাই, করাচির একটি আবাসিক ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় হুমায়রার মরদেহ। বয়স মাত্র ৩২। ফ্ল্যাটটি থেকে দীর্ঘদিন কোনো সাড়া শব্দ না পাওয়ায় ভবনের মেইনটেনেন্স টিম বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে ঢুকে একটি চরম পচনধরা মরদেহ উদ্ধার করে—যা দেখে শিউরে উঠেছিল সবাই।

নয় মাস আগে মৃত্যু—কিন্তু কেউ জানল না!

করাচি পুলিশ জানিয়েছে, হুমায়রার মৃত্যু ঘটেছে নয় মাস আগে, অর্থাৎ ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে। ফোন রেকর্ড বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তার মোবাইল ফোনটি সর্বশেষ ব্যবহার করা হয় সেই মাসেই। তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোতেও শেষ অ্যাকটিভিটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের।

এই দীর্ঘ সময় ধরে একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পড়ে ছিলেন—এবং কেউ জানতে পারল না! না প্রতিবেশী, না আত্মীয়, না বন্ধুবান্ধব—একজন মানুষ কতটা একা হতে পারে তার করুণ উদাহরণ হুমায়রার মৃত্যু।


পচাগলা অবস্থায় লাশ, ফ্রিজে মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার

ডাক্তারদের মতে, মরদেহটি ছিল চরম পচনধরায় আক্রান্ত। রুমে প্রবেশের সময় সুরক্ষা পোশাক পরেও পুলিশ সদস্যদের কষ্ট হচ্ছিল। ফ্রিজে থাকা খাবারগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ছয় মাস আগে। সব কনটেইনারে মরিচা লেগে গেছে, পানির কল শুকিয়ে গিয়েছে দীর্ঘদিন ব্যবহারের অভাবে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল অক্টোবর থেকেই—কারণ বিল পরিশোধ হয়নি। ঘরে কোনো মোমবাতিও ছিল না।

এই ফ্ল্যাট যেন এক মৃত্যুপুরী! একটি জীবন্ত মানুষ কীভাবে নিঃসঙ্গতায় বিলীন হয়ে যায়, সেই দৃশ্য যেন এখানে দৃশ্যমান।


প্রতিবেশীরা কিছুই বুঝতে পারেননি

চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, একই ভবনে বসবাস করলেও প্রতিবেশীদের কেউ দুর্গন্ধ পর্যন্ত পাননি। স্থানীয়রা জানান, হুমায়রাকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে। তিনি খুব একটা ঘরের বাইরে যেতেন না। ফলে কারো নজরে না পড়ায় তার অনুপস্থিতি কেউ টের পায়নি।

এটাই কী আমাদের সমাজের বর্তমান অবস্থা—যেখানে কেউ কারো খবর রাখে না?


পরিবারও নিল না মরদেহ, কেন ছিন্ন হয়েছিল সম্পর্ক?

হুমায়রার পরিবারের প্রতিক্রিয়ায় যেন আরও হৃদয়বিদারক হয়ে উঠেছে এই কাহিনি। তার পরিবার মরদেহ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে! বাবা জানান, গত দুই বছর ধরে মেয়ের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। ভাই নবীদ আসগর বলেন, হুমায়রা দেড় বছর আগে শেষবার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

সূত্রে জানা গেছে, লাহোর থেকে করাচিতে আসার পর গত সাত বছর ধরে একা বসবাস করছিলেন হুমায়রা। অভিনেত্রী হিসেবে শুরু করেছিলেন ক্যারিয়ার, তবে কাজের সংখ্যা খুব বেশি ছিল না। এক পর্যায়ে মিডিয়া থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। বন্ধু ও পরিচিতদের সঙ্গেও যোগাযোগ কমে যায়।


কীভাবে এমন মৃত্যু হলো? তদন্তে করাচি পুলিশ

পুলিশ জানিয়েছে, এখনো হুমায়রার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই মনে করা হচ্ছে, তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে তদন্ত চলছে। ফরেনসিক টিম মরদেহ এবং ফ্ল্যাটের নমুনা সংগ্রহ করেছে। আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা না কি খুন—সম্ভাব্য সব দিক থেকে তদন্ত চলছে।

তবে পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত এমন কোনো আলামত মেলেনি যা হত্যার ইঙ্গিত দেয়।


সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল, উঠছে প্রশ্ন

এই ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—একজন অভিনেত্রী, যিনি একসময় মিডিয়ায় পরিচিত ছিলেন, তিনি এতটা নিঃসঙ্গ কীভাবে হয়ে পড়লেন? কেন কেউ তার খোঁজ নিল না?

এমনকি অনেকেই বলছেন, হুমায়রার এই মৃত্যু যেন শুধু এক ব্যক্তির না, বরং এটি একটি সমাজব্যবস্থার ব্যর্থতা।


নারী শিল্পীদের জীবনের কঠিন বাস্তবতা

পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার শোবিজ জগতে একাকীত্ব, মানসিক অবসাদ এবং নিরাপত্তাহীনতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে নারী শিল্পীরা মিডিয়া থেকে দূরে চলে গেলে প্রায়ই হারিয়ে যান সমাজের আলো থেকে। হুমায়রার মৃত্যু সেই বাস্তবতারই এক চরম দৃষ্টান্ত।


কে ছিলেন হুমায়রা আসগর?

হুমায়রা আসগর একজন পাকিস্তানি মডেল ও টিভি অভিনেত্রী ছিলেন। ২০১০-এর দশকে কিছু টিভি সিরিয়াল ও বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছেন। তবে খুব বেশি আলোচিত কোনো প্রজেক্টে তিনি ছিলেন না। শোবিজ ছাড়ার পর বেশিরভাগ সময়ই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন।

কিছু সূত্র বলছে, হুমায়রা মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। একা থাকতেন, খুব বেশি কারো সঙ্গে মিশতেন না।


সমাপ্তি: একটি মৃত্যুর দায় কার?

হুমায়রার মৃত্যু নিয়ে এখন একটাই প্রশ্ন—এই করুণ পরিণতির জন্য দায়ী কে?

পরিবার? প্রতিবেশী? সমাজ? না কি সেই কঠিন বাস্তবতা, যেখানে মানুষ ক্রমেই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে?

হুমায়রার ৯ মাস ধরে পড়ে থাকা লাশ যেন আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—মানুষের সম্পর্কগুলো কতটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। প্রযুক্তি আর ব্যস্ত জীবনের মাঝে আমরা ভুলে যাচ্ছি পাশে থাকা মানুষটির খবর রাখাও আমাদের দায়িত্বের অংশ।