বিষয়বস্তু
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় এবং সম্মানিত অভিনেত্রী জয়া আহসান বরাবরই প্রাণীদের প্রতি নিজের ভালোবাসা ও সচেতনতা প্রকাশ করে এসেছেন। পর্দার বাইরেও জয়ার আরেকটি পরিচয় আছে—তিনি একজন প্রাণিপ্রেমী, যিনি শুধু ভালোবাসাই দেখান না, প্রাণীদের অধিকার রক্ষায় কাজও করেন। এটাই তাকে আলাদা করে তুলে ধরে সাধারণ তারকাদের ভিড় থেকে।
তবে এবার কোনো সিনেমা কিংবা পুরস্কার নিয়ে নয়—তিনি আওয়াজ তুলেছেন প্রাণী অধিকার নিয়ে। চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের দুরবস্থার চিত্র সামনে এনে তাদের ‘বিনা অপরাধে বন্দি’ অবস্থাকে তুলনা করেছেন জেলখানার সঙ্গে। তার মতে, এই পৃথিবীর সব চিড়িয়াখানা একেকটি জেলখানা, যেখানে প্রাণীরা অন্যায়ভাবে শাস্তি পাচ্ছে।
ভালুকটির করুণ অবস্থা ঘিরে শুরু হয় সমালোচনা
সম্প্রতি ময়মনসিংহের জয়নুল আবেদিন পার্কের মিনি চিড়িয়াখানার একটি ভালুককে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে আসে একটি ভয়াবহ চিত্র। ভালুকটির শরীরে পচন ধরেছে, তার একটি পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, আর সে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছে। আশেপাশে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, কিন্তু চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমন নির্মম চিত্র যে কারোর মন কাঁপিয়ে তুলবে।
এই হৃদয়বিদারক সংবাদটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জয়া আহসান নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তা শেয়ার করেন এবং অত্যন্ত আবেগী মন্তব্য করেন—
“চিড়িয়াখানাই পৃথিবীর সেই জেলখানা, যেখানে বিনা দোষে সাজা হয়। বন্ধ করা হোক পৃথিবীর সব চিড়িয়াখানা নামক জেলখানা।”
একজন অভিনেত্রী নাকি একজন সচেতন নাগরিক? দুটোই!
জয়া আহসান শুধু কথায় সীমাবদ্ধ থাকেন না, তার কাজেই প্রমাণ করেন নিজের দায়বদ্ধতা। এর আগেও তিনি হাতি নির্যাতনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন, যার ফলে আদালত হাতির নির্যাতন বন্ধে রায় দেয়। সেই ঘটনার পর এবার তিনি সরাসরি চিড়িয়াখানাগুলোর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রাণীদের নিয়ে আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে জয়ার এই অবস্থান নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ। কারণ এখনও অনেকে চিড়িয়াখানাকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে দেখে, অথচ সেখানে বন্দি প্রাণীদের অবস্থা কতটা শোচনীয় তা হয়তো কল্পনাও করা যায় না।
চিড়িয়াখানা—বিনোদন না নিষ্ঠুরতা?
চিড়িয়াখানা দীর্ঘদিন ধরে শিশু-কিশোরদের জন্য এক ধরনের ‘বিনোদনের স্থান’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। তবে আধুনিক প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলো এবং সচেতন মানুষরা প্রশ্ন তুলছেন—এই বিনোদন কি সত্যিকার অর্থে ন্যায়সঙ্গত? যেখানে প্রাণীরা ছোট ছোট খাঁচায় দিনের পর দিন বন্দি থাকে, স্বাভাবিক পরিবেশ ও চলাফেরার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, সেখানে আমরা কি সত্যিই আনন্দ পাচ্ছি নাকি অসচেতনভাবে নিষ্ঠুরতার সাথেই একাত্মতা প্রকাশ করছি?
বিকল্প কী হতে পারে?
অনেকেই বলবেন, তাহলে শিশুদের শেখানোর বা প্রাণীদের দেখানোর বিকল্প কী? এর উত্তরে জয়া এবং অন্যান্য প্রাণিপ্রেমীরা বলেন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ডকুমেন্টারি, ন্যাচারাল রিজার্ভ বা সাফারি পার্ক হতে পারে একটি বিকল্প। যেখানে প্রাণীরা খোলা প্রাকৃতিক পরিবেশে থেকে আমাদের দেখতে দেবে নিজেদের স্বাভাবিক জীবনধারা, আর মানুষও শিখতে পারবে তাদের সম্পর্কে, সম্মান দেখাতে পারবে তাদের অস্তিত্বকে।
নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া: ‘একদম ঠিক কথা বলেছেন জয়া’
জয়ার পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পর নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। কেউ কেউ লিখেছেন, “আপু ঠিকই বলেছেন, এভাবে প্রাণীদের কষ্ট দিয়ে আমাদের বিনোদনের কোনো মানে হয় না।” অন্য একজন লেখেন, “জয়ার মতো মানুষই আমাদের চোখ খুলে দেয়।”
সমাজ পরিবর্তনের পথে ছোট্ট এক পদক্ষেপ
সমাজ পরিবর্তন হয় একসাথে অনেক মানুষ যখন সচেতন হয়। জয়ার এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে একটি আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছে। এখন আমাদের কাজ—নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা, আর সেইসব প্রাণীদের হয়ে কথা বলা, যারা নিজেরা বলতে পারে না।
উপসংহার: প্রকৃতি ও প্রাণীর প্রতি দায়িত্ব আমাদের সকলের
জয়া আহসানের মতো তারকাদের সচেতন ও সাহসী পদক্ষেপ আজ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা কেবল মানুষ নয়—এই পৃথিবীর অন্য সকল প্রাণীর সহবাসী। তাই তাদের সম্মান ও অধিকার রক্ষায় আমাদের প্রতিদিনই সচেতন হওয়া উচিত। চিড়িয়াখানা শুধু বিনোদন নয়, বরং বহু প্রাণীর দুর্ভোগের স্থান—এটা বুঝতে হবে, জানতে হবে এবং মানুষকে জানাতে হবে।
সচেতনতার আলো ছড়াক, যেন পশুরাও পায় মুক্তির স্বাদ। 🐻🌿
NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।