Table of Contents
সম্প্রতি বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন মডেল মেঘনা আলম ও তার পূর্বপরিচিত হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী দেওয়ান সমির। একটি চাঁদাবাজির মামলায় সমিরকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ, যা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
এই ঘটনায় উঠেছে বহু প্রশ্ন—কে এই দেওয়ান সমির? কেনই বা তাকে রিমান্ডে নেওয়া হলো? তার সাথে মডেল মেঘনা আলমের সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতেই আজকের এই প্রতিবেদন।
কে এই দেওয়ান সমির?
দেওয়ান মো. সমির একজন পরিচিত ব্যবসায়ী, যিনি রাজধানী ঢাকায় বেশ কিছু ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করেন বলে জানা গেছে। তবে তার বিরুদ্ধে এবার উঠেছে এক ভয়ঙ্কর অভিযোগ—বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে ব্যবহার করে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি!
পুলিশ জানিয়েছে, তিনি মডেল মেঘনা আলমের পূর্বপরিচিত এবং এই ‘ঘনিষ্ঠতা’ কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চপদস্থ কূটনৈতিক ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে আসছিলেন তিনি।
চাঁদাবাজির বিস্ফোরক অভিযোগ
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দেওয়ান সমির সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসেফ আল দুহাইলানের কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৫০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। এর জন্য তিনি মডেলদের ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) জানায়, এই পরিকল্পনা গত জানুয়ারি থেকেই চলছিল এবং রাষ্ট্রদূতের কাছে একাধিকবার চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি গোপনে চললেও সম্প্রতি এটি প্রকাশ্যে আসে এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
রিমান্ডের আদেশ ও আদালতের মন্তব্য
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সমিরকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। তবে শুনানি শেষে বিচারক তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে অনুমতি দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে জানান, দেওয়ান সমির কৌশলে নারীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক ও অর্থবান ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে আসছেন।
মডেল মেঘনা আলমের গ্রেফতার ও সংশ্লিষ্টতা
দেওয়ান সমিরের মামলার সঙ্গে জড়িত আরেক আলোচিত নাম মডেল মেঘনা আলম। ডিবি পুলিশ জানায়, তাকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করা হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তবে তার বিরুদ্ধে এখনো সরাসরি চাঁদাবাজির মামলা না হলেও, তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা উঠে আসায় তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি।
চাঞ্চল্যকর তথ্য: নারী ব্যবহার করে ‘ফাঁদে ফেলা’ ছিল কৌশল
এই মামলার সবচেয়ে আলোচ্য দিক হলো—নারী মডেলদের ব্যবহার করে বিদেশি ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলা এবং এরপর অর্থ দাবি। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, দেওয়ান সমির এই কাজটি একা করেননি। তার একটি প্রভাবশালী চক্র রয়েছে, যারা সুকৌশলে এসব ‘টার্গেট’ নির্ধারণ করে এবং একাধিক মডেলকে ওই কাজে ব্যবহার করে।
এই বিষয়টি সামাজিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবেও দেশের মর্যাদা নষ্ট করার মতো ঘটনা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং দেশের ভাবমূর্তি জড়িত থাকায় এই মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। দেওয়ান সমিরের ফোনালাপ, আর্থিক লেনদেন, যোগাযোগ মাধ্যমসহ সবকিছু বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
এছাড়া মেঘনা আলম ছাড়াও আরও কিছু নারী মডেলের নাম উঠে এসেছে যাদেরকে তদন্তে ডাকা হতে পারে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর নেটিজেনদের মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে বলছেন, এ ধরনের ঘটনা দেশের যুবসমাজের জন্য এক অন্ধকার দৃষ্টান্ত। কেউ কেউ আবার বলছেন, শোবিজ অঙ্গনের নির্দিষ্ট কিছু চক্র বরাবরই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং সময় এসেছে এসব অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচনের।
শেষ কথা
মডেল মেঘনা আলম ও ব্যবসায়ী দেওয়ান সমিরের এই ঘটনা বাংলাদেশের সমাজ ও বিচারব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এখন সকলের নজর তদন্তের পরবর্তী ধাপে—আসলে আর কারা জড়িত এই চক্রে?
এই মামলার পরিণতি দেশের আইনশৃঙ্খলা ও বিচার বিভাগের ওপর গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা হয়ে থাকবে।
NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।