সম্প্রতি ভারতের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল জি বাংলায় শুরু হওয়া একটি নতুন ধারাবাহিক নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ধারাবাহিকটির নাম ‘ইশক সুবহান আল্লা’। মূলত এটি জি টিভিতে প্রচারিত একই নামের হিন্দি সিরিয়ালের বাংলা রিমেক। তবে বাংলা সংস্করণ প্রকাশ্যে আসতেই সামাজিক মাধ্যমে নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
কী রয়েছে ইশক সুবহান আল্লা ধারাবাহিকে?
ধারাবাহিকের প্রোমোতে দেখা যায়, এক উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নায়িকা ও তার বন্ধুরা আটকে পড়ে। কোনো উপায় না পেয়ে তারা মুসলিম নায়কের সাহায্যে একটি মসজিদে আশ্রয় নেয়। এরপর নায়ক জানতে পারেন, নায়িকার বন্ধুরা মুসলিম নন, বরং হিন্দু। এরপর কিছু সংলাপ এবং পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় যা অনেক দর্শকের চোখে ইসলাম ধর্মের প্রতি অবমাননাকর বলে মনে হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভের ঝড়
প্রোমো প্রকাশের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দর্শকরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন। অনেকে মন্তব্য করেন, “ইসলামকে অপমান করা হয়েছে”, আবার কেউ কেউ লেখেন, “সুবহান আল্লাহ মানে জানেন না, এমন নাম নিয়ে নাটক বানাচ্ছেন, এটা কি মজা?”
আরও একজন মন্তব্য করেন, “আল্লাহর নাম নিয়ে নাটক বানানোর অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে?” অনেকে সিরিয়ালটি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বয়কটের ডাকও দিয়েছেন।
কেন এই বিতর্ক?
মূল সমস্যা সিরিয়ালের বিষয়বস্তু এবং উপস্থাপন ভঙ্গিকে কেন্দ্র করে। অনেকেই মনে করছেন, এই নাটকের চিত্রনাট্যে ইসলাম ধর্মকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা নেতিবাচক ও বিভ্রান্তিকর বার্তা দিতে পারে। বিশেষ করে মসজিদের মতো পবিত্র স্থানকে নাটকীয় রূপে দেখানো এবং সংলাপে ব্যবহৃত কিছু শব্দ ইসলাম ধর্মের মৌলিক আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই দাবি অনেকের।
আইনি পদক্ষেপ
এই বিষয়ে মুম্বাইভিত্তিক ইসলামিক সংগঠন রেজা অ্যাকাডেমি আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। সংগঠনটি ধারাবাহিকটির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে এবং ধারাবাহিকটির সম্প্রচার বন্ধের দাবি জানিয়েছে। মামলাটি পরিচালনা করছেন আইনজীবী হিতেশ সি সোনি।
তিনি ভারতের একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার প্রভাব অনেক, বিশেষ করে শিশুদের ওপর। তাই বিষয়টি শুধু ধর্মীয় অনুভূতির নয়, বরং সমাজের সামগ্রিক ভাবনার সঙ্গে যুক্ত। এই ধারাবাহিকটি প্ররোচনামূলক এবং আমাদের মতে, এর সম্প্রচার বন্ধ হওয়া উচিত।”
মামলার অভিযোগ
আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এই ধারাবাহিকটির স্ক্রিপ্ট ও উপস্থাপনায় ইসলাম ধর্মকে অপমান করা হয়েছে এবং এমন বার্তা ছড়ানো হয়েছে যা ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়াতে পারে। মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ১২৪এ, ১৫৩এ, ১৫৩বি, ৫০৪, ২৯২ এবং ২৯৫এ এর আওতায় অভিযোগ আনা হয়েছে। একইসঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৯৫ ধারা অনুসারে ধারাবাহিকটি বন্ধের আবেদন জানানো হয়েছে।
জনগণের উদ্বেগ
নেটিজেনরা বারবার প্রশ্ন তুলছেন, “বর্তমান সময়ের মতো একটি অস্থির সময়ে এমন একটি বিতর্কিত সিরিয়াল প্রচার করার প্রয়োজনীয়তা কী ছিল?” কেউ কেউ আরও কঠোর ভাষায় বলেছেন, “এবার ষোলো কলা পূর্ণ হলো, ইসলামকে অপমান করে নাটক বানানোই বাকি ছিল।”
ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান থাকা উচিত
এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিলো, ধর্মীয় অনুভূতি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। কোনো শিল্পকর্ম, নাটক, চলচ্চিত্র বা ধারাবাহিক বানানোর সময় এই বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি। ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতি কারও ব্যক্তিগত বিশ্বাসের অংশ এবং তা নিয়ে বিনোদনের নামে উপহাস করা একেবারেই অনুচিত।
জি বাংলার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া?
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জি বাংলার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত সমালোচনার মুখে পড়ায় চ্যানেলটি শিগগিরই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।