দক্ষিণী সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভু শুধু অভিনয় দিয়েই নয়, বরং নিজের জীবন, চিন্তা আর সাহসিক অবস্থান দিয়েও অনেক অনুরাগীর প্রেরণার উৎস। সম্প্রতি তিনি সমাজের এমন একটি বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন, যা নিয়ে আজও বহু মানুষ মুখ খোলেন না— নারীর ঋতুস্রাব।
সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তি, সংস্কৃতি আর সামাজিক উন্নয়ন এগিয়ে গেলেও, আমাদের সমাজে এখনো এমন কিছু বিষয় রয়ে গেছে যেগুলো নিয়ে কথা বলাকে লজ্জা কিংবা গোপনীয়তা বলে ধরে নেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উদাহরণ— নারীর ঋতুস্রাব বা মাসিক। সামান্থা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “এটা লুকিয়ে রাখার মতো কিছু নয়, বরং এটি নারীর শরীরের স্বাভাবিক ও শক্তিশালী একটি প্রক্রিয়া।”
ঋতুস্রাব নিয়ে নীরবতা কেন?
আজও অনেক পরিবারে, স্কুলে, এমনকি স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রেও ঋতুস্রাব নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা হয় না। টিভি বিজ্ঞাপনেও এখনো ‘লাল রক্ত’ দেখানো হয় না, ব্যবহার করা হয় ‘নীল তরল’! এই সংস্কার, এই নীরবতা আমাদের মেয়েদের মনোজগতে একটি ভয় ঢুকিয়ে দেয়— যেন তারা কিছু একটা “ভুল” করছে।
সামান্থা ঠিক এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন—
“নারীর দেহের একটি প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়াকে কেন আমরা লুকাতে শিখেছি?”
সামান্থার বার্তায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি
এক সাক্ষাৎকারে সামান্থা বলেন,
“আমরা নারী হিসেবে অনেকদূর এগিয়ে এসেছি। কিন্তু যখন ঋতুস্রাবের প্রসঙ্গ আসে, তখন হঠাৎ করে সবাই চুপ করে যায়। ফিসফিসিয়ে কথা বলা হয়। এটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন এটা কোনো গোপন বা নোংরা বিষয়।”
তিনি আরও বলেন,
“ঋতুস্রাব লজ্জার নয়, বরং এটি সুস্থতার লক্ষণ। আমাদের শরীর, মন— সবকিছুর মধ্যে এটির প্রভাব রয়েছে। এই প্রাকৃতিক বিষয়টিকে আমরা শক্তির প্রতীক হিসেবে দেখতে শিখি। এতে লজ্জার কিছু নেই।”
ঋতুস্রাব শুধু রক্তপাত নয়, একটি মানসিক ও শারীরিক অবস্থা
প্রতিমাসে নারীদের শরীরে ঘটে যাওয়া ঋতুচক্র শুধু রক্তপাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানসিক মেজাজ, আবেগ, ক্লান্তি, পেট ব্যথা, খিদে পরিবর্তন, মনোযোগে বিঘ্নসহ নানা কিছুতে প্রভাব ফেলে। সামান্থা বলেন,
“ঋতুস্রাব কেবল একটি শারীরিক ঘটনা নয়— এটি মানসিকভাবেও নারীর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের আরও সচেতন ও শিক্ষিত হওয়া দরকার।”
সামান্থার জীবনসংগ্রাম: শুধু অভিনয় নয়, বাস্তব জীবনের নায়িকা
২০২২ সালে সামান্থা ‘মায়োসাইটিস’ নামের একটি অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হন। এটি এমন একটি রোগ যেখানে শরীর নিজের কোষগুলোর বিরুদ্ধেই লড়াই শুরু করে দেয়। এই কঠিন সময়েও সামান্থা থেমে যাননি। আজও তিনি চিকিৎসার পাশাপাশি ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য বজায় রেখে এগিয়ে চলেছেন।
এই রোগের মধ্যে থেকেও তিনি নারী স্বাস্থ্য, সামাজিক বাধা এবং মানসিক সচেতনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বারবার নিজের অবস্থান জানিয়ে এসেছেন। তার এই সাহসিকতা তাকে শুধুই একজন অভিনেত্রী নয়, একজন সমাজ সচেতন নারী-নেত্রী হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে।
সমাজ বদলাবে কবে?
যখন একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সামান্থার মতো কেউ মুখ খোলেন, তখন তা সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোড়ন তোলে। কিন্তু শুধু তার বক্তব্যে পরিবর্তন আসবে না, যদি না আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হই।
- মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হবে, ঋতুস্রাব লজ্জার কিছু নয়।
- বাবা-মায়ের উচিত ছেলেমেয়ে উভয়কেই এ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঋতুস্রাব নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা এবং সঠিক তথ্য দিয়ে মেয়েদের প্রস্তুত করা জরুরি।
- কর্মস্থলে নারীদের ঋতুচক্রজনিত সমস্যা বুঝে নেওয়া এবং সহানুভূতির মনোভাব গড়ে তোলা প্রয়োজন।
মিডিয়া, সিনেমা এবং তারকার ভূমিকা
সামান্থার মতো তারকারা যখন সাহস করে এগিয়ে আসেন, তখন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দ্রুত ঘটে। মিডিয়াতে আরও বেশি করে এই ধরনের বার্তা তুলে ধরলে মেয়েরা নিজেদের নিয়ে গর্ব করতে শিখবে। তারা বুঝবে,
“আমি নারী, আমার শরীরের যা কিছু প্রাকৃতিক— সবই গর্বের, লজ্জার নয়।”
শেষ কথা
সামান্থা রুথ প্রভুর সাহসী বক্তব্য আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়— আমরা এখনও অনেকদূর পিছিয়ে। এমন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে ঘিরে সমাজে যে ট্যাবু এবং নীরবতা রয়েছে, তা ভাঙতেই হবে। এই পরিবর্তনের জন্য আমাদের প্রয়োজন শিক্ষা, সচেতনতা এবং একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা।
আমরা যদি এখনই কথা না বলি, তাহলে কখন? আর কে বলবে?
সামান্থা বলেছেন, আমরা নারীরা শক্তিশালী। আমাদের শরীরের প্রতিটি রূপই গর্বের। আর আমরা লুকাব না, গর্ব করবো।
কীভাবে সাহায্য করবেন এই বার্তা ছড়াতে?
👉 মেয়েদের স্বাস্থ্যসচেতনতা বিষয়ে বেশি কথা বলুন।
👉 ছোটদের সঠিক তথ্য দিন, ভয়ের নয়, সচেতনতামূলক বার্তা দিন।
👉 আর্টিকেলটি শেয়ার করে সামান্থার বার্তাটি ছড়িয়ে দিন।
NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।