বিষয়বস্তু
চিত্রনায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে মারধরের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে তার এক বছর বয়সী মেয়েকে খাবার খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহকর্মী পিংকি আক্তার ঢাকার ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেছেন। জিডিটি করা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০২৫।
ভাটারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাজহারুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, “পরীর বাসায় একজন গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তিনি থানায় জিডি করেছেন। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।”
পিংকির বয়ান: নির্যাতনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
পিংকি আক্তার জানান, প্রায় এক মাস আগে তিনি কাদের নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে পরী বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় কাজে যোগ দেন। তার প্রধান দায়িত্ব ছিল পরীমণির এক বছরের মেয়ের দেখাশোনা এবং তাকে খাবার খাওয়ানো। পিংকি বলেন, “বাচ্চাটাকে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর খাওয়ানোর নিয়ম ছিল। আমি সেটা মেনে চলতাম। কিন্তু বাচ্চার দেখাশোনার পাশাপাশি বাসার অন্যান্য কাজও করতে হতো।”
ঘটনার দিন, ২ এপ্রিল, পিংকি বাচ্চাকে বসিয়ে বাজারের তালিকা তৈরি করছিলেন। এ সময় বাচ্চাটি কাঁদতে শুরু করে। পরীমণির পরিচিত এক ব্যক্তি, সৌরভ, পিংকিকে বাচ্চাকে সলিড খাবার দেওয়ার পরামর্শ দেন। পিংকি জবাব দেন, “ভাই, বাচ্চাটা কিছুক্ষণ আগেই সলিড খেয়েছে। দুই ঘণ্টা এখনো হয়নি। আমি একটু কাজ সেরে দুধ খাওয়াবো।” এরপর তিনি দুধ তৈরি করতে যান।

কিন্তু এই কথোপকথনের মধ্যেই পরীর মেকআপ রুম থেকে বেরিয়ে আসেন এবং পিংকিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। পিংকি বলেন, “আমি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করলাম যে সলিড খাবারের সময় এখনো হয়নি, তাই দুধ দিতে যাচ্ছি। কিন্তু তিনি আমাকে বললেন, ‘বাচ্চাটা কি তোর না আমার?’ এরপরই তিনি আমাকে থাপ্পড় মারতে শুরু করলেন এবং মাথায় জোরে জোরে আঘাত করতে লাগলেন।”
মারধরের ভয়াবহতা
পিংকি আরও জানান, “প্রথমে ভেবেছিলাম দুই-একটা থাপ্পড় দিয়ে থেমে যাবেন। কিন্তু তিনি থামলেন না। আমাকে এত জোরে মারলেন যে আমি তিনবার মেঝেতে পড়ে গেলাম। তারপর আমার বাম চোখে এত জোরে থাপ্পড় মারলেন যে আমি এখনো সেই চোখে কিছু দেখতে পাই না।” মারধরের মাঝে পিংকি কান্নাকাটি করে হাসপাতালে যাওয়ার অনুরোধ করলেও পরীমণি তাকে গালি দিয়ে বলেন, “তুই কোথাও যেতে পারবি না। এখানেই মারবো, এখানেই চিকিৎসা করবো।” এরপর তিনি আবার মারতে এলে সৌরভ তাকে বাধা দেন।
কিন্তু সৌরভ বাধা দেওয়ায় পরীমণি তাকেও গালি দেন। এর মধ্যে পিংকি অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। প্রায় এক ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরলে তিনি বাসার আরেক গৃহকর্মী বৃষ্টির কাছে হাসপাতালে যাওয়ার সাহায্য চান। কিন্তু বৃষ্টি জানান, পরীমণি ঘুমিয়ে আছেন, তাকে বিরক্ত করা যাবে না।
উদ্ধার ও আইনি পদক্ষেপ
কোনো উপায় না দেখে পিংকি বাথরুমে লুকিয়ে কাদেরকে ফোন দিয়ে সাহায্য চান। কিন্তু তিনিও পরীমণিকে বিরক্ত করতে না চাওয়ায় সাহায্য করতে অস্বীকার করেন। অবশেষে পিংকি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দেন এবং পুলিশের কাছে উদ্ধারের আবেদন জানান। একই সময়ে তার এক কাজিনও ঘটনা জেনে পরীমণির বাসার সামনে চলে আসেন। পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।
পরীমণি এসব জানতে পেরে বৃষ্টিকে নির্দেশ দেন পিংকিকে বাসার নিচে নামিয়ে দিতে। এরপর পিংকি রিকশায় করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। তিনি বলেন, “মারধরের কারণে আমি এখনো অসুস্থ। প্রাথমিকভাবে জিডি করেছি। ভবিষ্যতে তার বিরুদ্ধে আরও আইনি পদক্ষেপ নেব।”
চলমান তদন্ত
এ ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। পরীমণির বিরুদ্ধে উঠা এই অভিযোগ সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে পরীমণির পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভিডিও
শেয়ার করে NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।