প্রচারে খুব একটা থাকেন না অরিজিৎ সিং। নিজের ব্যক্তিগত জীবন রাখেন লাইমলাইটের বাইরে। কিন্তু পহেলগাঁওয়ের এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর তিনিও আর চুপ থাকলেন না। নিজের গোপন এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে একটি আবেগঘন পোস্ট করে জানালেন, তিনি কতটা গভীরভাবে প্রভাবিত।
কাশ্মীর আবার কাঁপলো রক্তাক্ত জঙ্গি হানায়। জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও অঞ্চলে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক সন্ত্রাসবাদী হামলা শুধু গোটা দেশকে নয়, নাড়িয়ে দিয়েছে ভারতবাসীর হৃদয়। ধর্মীয় পরিচয় জেনে টার্গেট করে গুলি চালিয়েছে জঙ্গিরা। বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে নিরীহ হিন্দু পর্যটকদের। এমন বর্বর ঘটনায় কেঁপে উঠেছে জনসাধারণ থেকে শুরু করে বলিউডও। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছেন বিভিন্ন তারকা, আর এই তালিকায় এবার সামনে এল দেশের অন্যতম সেরা কণ্ঠশিল্পী অরিজিৎ সিং-এর নাম।
“খবর শুনে অসুস্থ বোধ করছি…”
অরিজিৎ সিংয়ের এক্স পোস্টে লেখা,
“পহেলগাঁওয়ের খবর শুনে অসুস্থ বোধ করছি। ওই পরিবারগুলো! ওঁরা এটার মোকাবিলা করবেন কী করে, ঈশ্বরই জানেন।”
মাত্র কয়েকটি বাক্য, কিন্তু তার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক অসহায় আর্তি, এক মর্মাহত শিল্পীর আত্মা। যিনি শুধু গানেই নয়, হৃদয়ের গভীর থেকে মানুষ ও সমাজকে ভালোবাসেন।
অরিজিৎ সিং কেন এই ঘটনার প্রতিবাদ করলেন?
অরিজিৎ বরাবরই রাজনৈতিক বা সাম্প্রদায়িক ইস্যু থেকে দূরে থাকেন। কিন্তু যখন মানবতার উপর আঘাত আসে, তখন তিনি পিছিয়ে থাকেন না। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সামাজিক বা জাতীয় সংকটে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন। পহেলগাঁওয়ের ঘটনা তাঁকে এমনভাবে নাড়া দিয়েছে, যে তিনি এবার নিজেকে সংযত রাখতে পারলেন না।
কী ঘটেছিল পহেলগাঁওয়ে?
কাশ্মীরের বৈসরণ উপত্যকা, যা পরিচিত ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামে, পর্যটকদের ভরপুর একটি জায়গা। সেখানে আচমকা ঢুকে পড়ে একদল সশস্ত্র জঙ্গি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা পর্যটকদের ধর্ম জানার পরই গুলি চালায়। শুধুমাত্র হিন্দু বলে পরিচয় দিলে তাঁদের খুন করা হয়। এ এক ভয়ানক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদ, যার প্রেক্ষিতে গোটা দেশ এখন ফুঁসছে ক্ষোভে।
বলিউডও চুপ নয়
শুধু অরিজিৎ নন, এই ঘটনার পর অনেক বলিউড তারকাও সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন। কেউ লিখেছেন “শাস্তি চাই”, কেউ বলছেন “এটা মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ।” সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে এক প্রতিবাদের প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু অরিজিৎ-এর মতো একজন শান্ত, নির্লিপ্ত শিল্পী যখন সরব হন, তখন তার অভিঘাত আরও বেশি।
শিল্পীর সংবেদনশীলতা: নিছক প্রতিবাদ নয়, মানবিক আবেদন
অরিজিৎ তাঁর পোস্টে রাজনীতি করেননি, দোষারোপ করেননি। বরং এক সাধারণ মানুষের মতো বললেন—”এই পরিবারগুলো কীভাবে সয়ে নেবে এই যন্ত্রণা?” এই লাইনেই বোঝা যায়, তিনি কেবল একজন জনপ্রিয় গায়ক নন, একজন সহমর্মী মানুষ।
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া
পোস্টটি ভাইরাল হতেই কমেন্ট বক্সে ঢল নামে ভক্তদের প্রতিক্রিয়ার। কেউ লেখেন,
- “এই কারণে আমরা আপনাকে ভালোবাসি।”
- “আপনার এই পোস্ট কণ্ঠস্বর দিয়েছে হাজারো ভাঙা হৃদয়কে।”
- “আরও সেলিব্রিটিরা যদি এভাবে সামনে আসতেন!”
সরকার কী বলছে?
সরকার জানিয়েছে, ঘটনার পূর্ণ তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যেই এলাকায় অভিযান চলছে, এবং দোষীদের খুঁজে বের করার জন্য এনআইএ কাজ শুরু করেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের দাবি আরও বড়—এমন ঘটনায় যেন বারবার ফিরে না আসে।
উপসংহার:
কাশ্মীরের এই জঙ্গি হামলা শুধু একটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি মানবতার বিরুদ্ধে এক বড় আঘাত। এবং এমন সময়েই প্রয়োজন হয় সমাজের সব স্তরের মানুষের কণ্ঠস্বর। অরিজিৎ সিংয়ের মতো একজন গায়কের মৃদু কিন্তু গভীর প্রতিবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভালোবাসা, সহানুভূতি ও প্রতিবাদ—এই তিনটাই একসঙ্গে চলা সম্ভব।
NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।