NG Videos News

Entertainment Unlimited

বৃহস্পতিবার ৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
ওমর সানি

ঢাকাই চলচ্চিত্রের রোমান্টিক নায়ক হিসেবে খ্যাত ওমর সানি আজও কোটি দর্শকের হৃদয়ে এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছেন। রূপালি পর্দায় দীর্ঘ ক্যারিয়ারে উপহার দিয়েছেন একের পর এক হিট ছবি। ৬ মে, তাঁর জন্মদিন। কিন্তু এই দিনটি যতটা আনন্দের হওয়ার কথা, ওমর সানির কাছে তা ততটাই বেদনার। কারণ, এই মাসেই তিনি হারিয়েছেন তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে—মাকে।

ওমর সানি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৯ সালের ৬ মে, বরিশাল জেলার এক সাংস্কৃতিক পরিবারে। শৈশব থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহ ছিল তার, আর সেই আগ্রহই তাকে ১৯৯২ সালে “এই নিয়ে সংসার” ছবির মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রে নিয়ে আসে। সেই ছবির মাধ্যমে সানির অভিষেক হয়েছিল এবং তিনি ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন নব্বইয়ের দশকের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা।

তবে এই আনন্দময় ক্যারিয়ারের মধ্যেও মে মাস তার জীবনে এক কঠিন অধ্যায় হয়ে রয়েছে। কারণ, ২৩ মে তারিখে মৃত্যুবরণ করেন তার মা। এই ক্ষত তিনি আজও বহন করে চলেছেন অন্তরে। মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকেই তিনি মে মাসে কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠান রাখেন না এবং সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত অটুট থাকবে।

একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন

“এ মাসে একটা মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। ২৩ তারিখ আমার মা মারা গিয়েছেন। এই মাসটা আমার জন্য দুঃখের, আবার জন্মদিনের জন্য সুখেরও। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মে মাসে কখনো কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠান করব না।”

তার এই কথার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে একটি সন্তানের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও অপার মমতার স্মৃতি। যেখানে একদিকে নিজ জন্মদিন, অন্যদিকে মাকে হারানোর দিন—এই দুই বিপরীত অনুভূতির ভার তিনি একাই বহন করেন।

এবারের জন্মদিনে ওমর সানির পরিবার দেশের বাইরে অবস্থান করলেও প্রযুক্তির সাহায্যে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। তিনি বলেন,
“পরিবার বাহিরে আছে। সোশ্যাল মিডিয়া আছে, ফোন আছে—সবসময় কথা হয়। আজও হবে। তবে আমি আজ কিছু কাছের মানুষের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই।”

ভক্তদের উদ্দেশে এই অভিনেতা বলেন,

“মানুষের কাছাকাছি থাকতে চাই। দেশের ভালো মানুষদের পাশে থাকতে চাই। আমি স্পষ্টভাবে কথা বলি, ভবিষ্যতেও বলব। কে কী বলল, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। যারা বুঝবে, তারা বুঝে নেবে।”

ওমর সানি শুধু একজন অভিনেতাই নন, তিনি একজন দায়িত্বশীল পরিবারপ্রেমী মানুষও। ব্যক্তিজীবনে তিনি আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমীকে ১৯৯৬ সালে বিবাহ করেন। তারা এখন দেশের শোবিজ জগতের অন্যতম সফল দম্পতি। এই দম্পতির ঘরে রয়েছে এক পুত্র এবং এক কন্যা সন্তান। অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে এখনও তারা একসঙ্গে রয়েছেন, যেটা অনেক দাম্পত্য জীবনের জন্য অনুপ্রেরণা।

২০০৩ সালে “ওর দালাল” ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি তার ক্যারিয়ারে নতুন মোড় আনেন। সেখানেও ছিলেন প্রশংসিত। এরপর শাকিব খানের সঙ্গে একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন, যা প্রশংসা কুড়িয়েছে দর্শকমহলে।

ওমর সানির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, তিনি কখনো বিতর্কের মধ্যে থাকেননি। সবসময় স্পষ্টবাদী, সৎ এবং নীতির উপর দাঁড়িয়ে কাজ করেছেন। এই কারণে তার প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা বজায় রেখেছেন তার সহকর্মী এবং অনুরাগীরা।

আজকের দিনে, যখন অধিকাংশ তারকারা সোশ্যাল মিডিয়ায় জন্মদিন ঘিরে ফ্যানফেয়ারে ব্যস্ত, সেখানে ওমর সানি নিজের জন্মদিনটিকেও দেখেন এক ভিন্ন আবেগ ও দৃষ্টিকোণ থেকে। তার জীবনের অভিজ্ঞতা, ব্যথা, ভালোবাসা, সবকিছুর মাঝে রয়েছে এক গভীর মানবিকতা।

ভক্তদের প্রতি তার বার্তা স্পষ্ট—


“আমি চাই মানুষ আমাকে আমার কাজ দিয়ে মনে রাখুক। আমি আর কিছুর চেয়ে বেশি চাই, মানুষের হৃদয়ে থাকতে।”

এই নিবন্ধের মাধ্যমে আমরা শুধু ওমর সানির একটি ব্যক্তিগত অনুভূতির গল্প জানলাম না, বরং একজন শিল্পীর মানবিক দিকটিও উপলব্ধি করতে পারলাম। যিনি পর্দায় নায়ক, আবার বাস্তব জীবনে একজন উদারপ্রাণ, মানবিক, পারিবারিক মানুষ।

আজকের এই বিশেষ দিনে, আমরা ওমর সানিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই এবং তার মায়ের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।