NG Videos News

Entertainment Unlimited

শনিবার ৩রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শাহরুখ খান

বলিউড কিং খ্যাত শাহরুখ খান, যিনি পর্দায় যতটা দুর্দান্ত, বাস্তব জীবনে ততটাই আবেগী ও পারিবারিক মানুষ। কাশ্মিরের সঙ্গে তাঁর একটি ভিন্ন রকম সম্পর্ক রয়েছে। আর সেই সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তাঁর বাবা।

১৯৮১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে শাহরুখ হারান তাঁর বাবাকে। বাবার মৃত্যু তার জীবনে এক শূন্যতা সৃষ্টি করে, যা পূরণ হয়নি এত বছরেও। সেই শূন্যতার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল কাশ্মির—এক সময় তাঁর বাবার প্রিয় জায়গা, যে উপত্যকায় তাঁর শৈশব-কৈশোরের অনেকটা সময় কেটেছে।

কাশ্মিরে না যাওয়ার অদৃশ্য বাধা

এই দীর্ঘ ৪৩ বছর শাহরুখ কাশ্মিরে যাননি, যদিও বন্ধুরা, পরিবার এমনকি কাজের প্রয়োজনে বারবার ডেকেছে।
তিনি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেন—

“কাশ্মিরে আমাকে বন্ধুরাও বহুবার ডেকেছে, আমার পরিবার ছুটিতে গেছে। শুটিংয়ের সুযোগও এসেছে। কিন্তু আমি যাইনি। কার সঙ্গে যাব কাশ্মিরে? বাবা নেই আর! ওখানে গেলে বাবাকে খুব মিস করব।”

এই কথায় বোঝা যায়, শুধু একটা জায়গা নয়, কাশ্মির ছিল তাঁর বাবার স্মৃতির আধার।

যশ চোপড়ার হাত ধরে ফিরে যাওয়া

২০১২ সালে পরিচালক যশ চোপড়ার প্রস্তাবে শেষ পর্যন্ত কাশ্মির যান শাহরুখ। তখন চলছিল ‘জাব তাক হ্যায় জান’ ছবির শুটিং।
যশ চোপড়াকে তিনি বাবার মতোই সম্মান করতেন। তাই যশ যখন বলেছিলেন—

“আমার সঙ্গে চলো, আমি তোমাকে কাশ্মির দেখাব।”
তখন আর না বলতে পারেননি।

কাশ্মিরে পৌঁছে উপত্যকার সৌন্দর্য ও শীতল হাওয়া তাঁকে আবেগে ভাসিয়ে দেয়। পরে একাধিকবার তিনি জানান,

“উপত্যকা ঘুরে দেখার সময় মনে হচ্ছিল, যেন বাবাই যশ চোপড়ার রূপ ধরে আমাকে কাশ্মির দেখাচ্ছেন।”

এই সফর তাঁর জীবনে একটা ইমোশনাল মাইলস্টোন হয়ে থাকে।


সন্ত্রাসী হামলার খবর এবং শাহরুখের প্রতিক্রিয়া

২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল কাশ্মিরের প্যাহেলগাঁও এলাকায় ঘটে যায় এক ভয়াবহ ঘটনা।
স্থানীয় একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন নিরীহ পর্যটক। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে শোকাচ্ছন্ন গোটা ভারত। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ ঝাড়েন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বলিউড তারকারাও।

অজয় দেবগন, সঞ্জয় দত্ত, ভিকি কৌশল, করণ জোহর সবাই এই ঘটনার নিন্দা জানান।

কিন্তু সবার চোখ তখন একটাই দিকে—শাহরুখ খানের প্রতিক্রিয়া।

কারণ, যে উপত্যকার সঙ্গে তাঁর আত্মিক টান, ব্যক্তিগত ইতিহাস, বাবার স্মৃতি জড়িত—সেই জায়গায় এমন নৃশংসতা তাঁকে ব্যথিত করবেই।

শাহরুখের শোকবার্তা

এই হামলার পরের দিন এক আবেগঘন শোকবার্তা দেন শাহরুখ খান। তিনি বলেন—

“কাশ্মির শুধু একটি জায়গা নয়। এটি আমার বাবার স্মৃতি, আমার শৈশবের অনুভব। সেখানে এমন বর্বরতা দেখলে শুধু একজন ভারতীয় হিসেবে নয়, একজন সন্তান হিসেবেও আমি স্তব্ধ হয়ে যাই।”

তিনি আরও জানান,

“এই নিরীহ মানুষগুলোর আত্মার শান্তি কামনা করি। এবং যারা এভাবে ঘৃণা ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ হোক, এটাই প্রত্যাশা করি।”


শাহরুখ খানের কাশ্মির সংলগ্ন আবেগ

কাশ্মির তাঁর জীবনের এক অধ্যায়, যা প্রকাশ্যে না বললেও তাঁর আচরণে বোঝা যায়।
একবার এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, কাশ্মিরে গিয়ে কেমন লেগেছিল?
তিনি হেসে উত্তর দেন—

“এমন মনে হচ্ছিল, যেন আমার বাবার হাত ধরে আমি সেই পুরোনো পাথুরে রাস্তাগুলো দিয়ে হাঁটছি…”

এই অনুভূতির জায়গা থেকে যখন কাশ্মিরে রক্ত ঝরে, তখন শাহরুখের চোখও যে অশ্রুসজল হবে, সেটাই স্বাভাবিক।


উপসংহার

আজকের এই সময়ে যখন বলিউড অনেকটাই ব্যবসামুখী হয়ে উঠেছে, তখন শাহরুখ খানের মতো একজন তারকার এই আত্মিক সংযোগ, আবেগ, পারিবারিক মূল্যবোধ সত্যিই অনন্য।

কাশ্মির তার কাছে শুধু শুটিং লোকেশন নয়, বরং একটি আত্মার ঠিকানা—একটি সম্পর্কের স্মৃতিবিজড়িত জায়গা। আর সেই কাশ্মিরেই যখন মৃত্যু নাচে, তখন সেটি শাহরুখ খানের হৃদয়েও রক্তক্ষরণ ঘটায়।

NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।