NG Videos News

Entertainment Unlimited

শুক্রবার ২রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সিপাহী

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কিছু জুটি এমন আছে, যারা একসঙ্গে পর্দায় এলেই বাজিমাত হতো। সেই রকমই এক কিংবদন্তি জুটি হলো ইলিয়াস কাঞ্চনমান্না। একজন আশির দশকের সুপারস্টার, অন্যজন নব্বই দশকের শেষভাগে ‘গণমানুষের নায়ক’ হয়ে উঠা একজন আইকন। তারা যখন এক সিনেমায় অভিনয় করেছেন, তখন তা শুধু সিনেমা নয়, যেন এক বিশাল ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের কাছে।

সিনেমা দখুন এইখানে

আশির দশকে ইলিয়াস কাঞ্চনের রাজত্ব

১৯৮০ সালের পরবর্তী সময়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশছোঁয়া। সিনেমা হলে তার পোস্টার মানেই দর্শকদের উন্মাদনা। তার স্টাইল, সংলাপ ও অভিনয়ের দক্ষতা তাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একচ্ছত্র সুপারস্টার। তার অভিনীত ‘বেদেনী’, ‘ভাইয়ের জন্য যুদ্ধ’, ‘নয়ন ভরা জল’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রগুলো বক্স অফিসে ব্যাপক সাফল্য লাভ করে।

মান্নার উত্থান ও নব্বই দশকে ছাপ

নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে আস্তে আস্তে চলচ্চিত্রে নিজের জায়গা তৈরি করতে থাকেন মান্না। ‘দাঙ্গা’, ‘আসামি হাজির’, ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’—এই ছবিগুলোতে অসাধারণ অভিনয় দিয়ে তিনি দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন। ১৯৯৬-৯৭ সাল নাগাদ তিনি ইলিয়াস কাঞ্চনের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কখনোই শত্রুতা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং, পর্দার বাইরে তারা ছিলেন পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহানুভূতিশীল।


‘সিপাহী’—একসাথে দুই সুপারস্টারের আগুন ঝরানো স্ক্রিন প্রেজেন্স

১৯৯৪ সালে পরিচালক কাজী হায়াৎ নির্মাণ করেন ‘সিপাহী’। এটি ছিল এমন একটি চলচ্চিত্র, যেখানে একইসাথে পর্দায় ছিলেন দুইজন সুপারস্টার—ইলিয়াস কাঞ্চন ও মান্না। শুরু থেকেই এই ছবি নিয়ে ছিল চরম উত্তেজনা। মুক্তির পর এটি রীতিমতো সুপারডুপার হিট হয়ে যায়।

সিপাহী_মান্না_ইলিয়াস_কাঞ্চন

‘সিপাহী’ ছিল গল্প, সংলাপ, অ্যাকশন, আবেগ এবং নাটকীয়তার এক দুর্দান্ত মিশ্রণ। দেশপ্রেম ও সংগ্রামের গল্প নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে ইলিয়াস কাঞ্চনের চরিত্রে ছিল আবেগ ও আত্মত্যাগের প্রতীক। অন্যদিকে, মান্নার চরিত্র ছিল সাহসী, দ্রোহী ও প্রতিবাদী এক যোদ্ধার।

শেষ দৃশ্য: ইলিয়াস কাঞ্চনের ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত?

চলচ্চিত্রের একেবারে শেষ দৃশ্য—যেখানে ইলিয়াস কাঞ্চনের আবেগময় সংলাপ ও কাঁপিয়ে দেওয়া অভিনয় এখনো দর্শকদের চোখে জল এনে দেয়। অনেকেই মনে করেন, এটা তার ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয়ের একটি।

এই সিনেমার জন্য ইলিয়াস কাঞ্চনের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার না পাওয়া সত্যিই ছিল এক বিশাল বঞ্চনা। দর্শক ও সমালোচক উভয়েই এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন।


কেন ‘সিপাহী’ এতটা গুরুত্বপূর্ণ?

১. দুই সুপারস্টার একই ছবিতে—এটাই ছিল বিশাল ঘটনা।
২. দেশপ্রেম, সামাজিক বার্তা ও মন ছুঁয়ে যাওয়া সংলাপ।
৩. ইলিয়াস কাঞ্চনের আবেগময় অভিনয় এবং মান্নার শক্তিশালী চরিত্রায়ন।
৪. কাজী হায়াৎ-এর মাস্টারফুল পরিচালনা।
৫. বক্স অফিসে রেকর্ড পরিমাণ আয়।


ইলিয়াস কাঞ্চন ও মান্না: কিংবদন্তিদের উত্তরাধিকার

আজকের প্রজন্ম হয়তো ‘সিপাহী’ সিনেমা দেখেনি, কিন্তু যদি কেউ জানে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস, তবে এই ছবির গুরুত্ব অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ইলিয়াস কাঞ্চন ও মান্নার মতো অভিনেতারা আমাদের চলচ্চিত্রের গৌরব। তারা প্রমাণ করেছেন, জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য শুধু চেহারা নয়, প্রয়োজন ত্যাগ, নিষ্ঠা আর দর্শকের সাথে গভীর সংযোগ।


শেষ কথা

‘সিপাহী’ ছিল না শুধু একটি সিনেমা, এটি ছিল দুই সুপারস্টারের শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের নিদর্শন। এ সিনেমার মাধ্যমে তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন, একসাথে কাজ করলে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাও এক অন্য মাত্রা পায়।

আজও যখন দর্শক ‘সিপাহী’ সিনেমা মনে করেন, তখন সেই সোনালি দিনের স্মৃতি হৃদয়ে বয়ে বেড়ান। দুই কিংবদন্তি—ইলিয়াস কাঞ্চন ও মান্না—যারা চিরকাল বেঁচে থাকবেন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে।

NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।