বিষয়বস্তু
বলিউডের গ্ল্যামার জগতে আলোচিত এক নাম মালাইকা আরোরা। কখনও ফ্যাশন স্টেটমেন্ট, কখনও ব্যক্তিগত সম্পর্ক, আবার কখনও বিতর্ক—সব কিছুতেই খবরের শিরোনামে থাকেন তিনি। তবে এবার তার নাম সামনে এসেছে এক গুরুতর আইনি ইস্যুতে।
সম্প্রতি মুম্বাইয়ের একটি আদালত মালাইকার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। শুনতে অবাক লাগলেও ঘটনাটি ঘটেছে ২০১২ সালের এক মারামারির মামলা ঘিরে, যেখানে মালাইকা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। কিন্তু বারবার তলব করা হলেও তিনি আদালতে হাজির হননি। আর তাই আদালত বাধ্য হয়ে এই পদক্ষেপ নেয়।
মামলার পেছনের ঘটনা: ২০১২ সালের এক রেস্তোরাঁর রাত
মামলার পটভূমি বেশ নাটকীয়। ঘটনাটি ঘটেছিল মুম্বাইয়ের কোলাবা এলাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে। সেখানে ডিনারে গিয়েছিলেন অভিনেতা সাইফ আলি খান, তার বন্ধুবান্ধব, সহ-অভিনেতা, এবং ঘনিষ্ঠজনেরা, যার মধ্যে ছিলেন মালাইকা আরোরাও।
তৎকালীন সময়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়, এক এনআরআই শিল্পপতি ইকবাল শর্মা-র সঙ্গে সাইফ আলির গায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠে, সাইফ, তার বন্ধু বিলাল আমরোহি এবং শাহিল লাদাখ মিলে ইকবাল শর্মার ওপর শারীরিক হামলা চালান।
প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন মালাইকা, কিন্তু হাজিরা দেননি!
এই ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন মালাইকা আরোরা। তাই আদালত থেকে তাকে একাধিকবার তলব করা হয়েছিল সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য। কিন্তু মালাইকা একাধিকবার অনুপস্থিত থাকেন। এড়িয়ে যান হাজিরা।
ফলে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে, দীর্ঘ ১৩ বছর পর মুম্বাই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মালাইকার বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
অমৃতা আরোরার সাক্ষ্য: ঘটনার ভেতরের গল্প
ঘটনার সাক্ষ্য দিতে সম্প্রতি আদালতে হাজির হন মালাইকার বোন অমৃতা আরোরা। তিনি বলেন,
“আমরা সবাই একসাথে মজা করছিলাম, হঠাৎ এক ব্যক্তি এসে চিৎকার করে বলেন—‘চুপ করো!’ এতে আমরা সবাই ভীষণ চমকে যাই। সাইফ তখন দাঁড়িয়ে গিয়ে ক্ষমা চান।”
তিনি আরও বলেন যে, সাইফ শান্তভাবে কথা বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু সেই ব্যক্তি রাগান্বিত থাকেন এবং পরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
তবে কিছুক্ষণ পর, যখন সাইফ ওয়াশরুমে যান, তখন তর্কবিতর্কের শব্দ শোনা যায়, আর এক পর্যায়ে অভিযোগ ওঠে যে সেই ব্যক্তি (ইকবাল শর্মা) সাইফকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করেন।
সাইফের বক্তব্য অনুযায়ী, ইকবাল শর্মা প্রথমে তাদের টেবিলে এসে নারীদের অপমানজনক ভাষায় কথা বলেন এবং উত্ত্যক্ত করেন। তখনই মূলত দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
আদালতের দৃষ্টিভঙ্গি: সাক্ষ্য এড়িয়ে যাওয়া মানে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া
আদালতের মতে, একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী যদি বারবার আদালতে উপস্থিত না হন, তাহলে সেটি ন্যায়বিচারে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মালাইকা বারবার অবজ্ঞা করেছেন আইনি নির্দেশ।
তাই তার বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যাতে তিনি আদালতে এসে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য প্রদান করেন।
আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির গুরুত্ব
ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী, একজন সাক্ষীর আদালতে হাজিরা দেওয়া বাধ্যতামূলক। যদি কেউ তা এড়িয়ে যান, তবে আদালত তাকে ‘কোর্ট কনটেম্পট’ বা আদালতের অবমাননার জন্য অভিযুক্ত করতে পারে। যদিও মালাইকার বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় পরোয়ানা জারি হয়েছে, তবুও বিষয়টি তার সম্মান ও ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া আলোচনায় ঝড়
এই খবর সামনে আসতেই মিডিয়ায় ঝড় ওঠে। অনেকেই বলছেন, “সেলেব্রিটিরা আইনের ঊর্ধ্বে নন”। সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে—কেউ বলছেন এটা মাত্রাতিরিক্ত সিদ্ধান্ত, আবার কেউ বলছেন আইনের প্রক্রিয়া যথার্থই চলছে।
মালাইকার প্রতিক্রিয়া কী?
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মালাইকা আরোরা এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি। তবে অনেকেই অপেক্ষায় আছেন, তিনি আদালতে গিয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপন করবেন কি না।
উপসংহার: ন্যায়বিচারের স্বার্থে সময়মতো সহযোগিতা জরুরি
মামলা যত পুরোনোই হোক, ন্যায়বিচারের পথ থেমে থাকে না। একজন জনপ্রিয় তারকা হিসেবে মালাইকা আরোরার উচিত ছিল আদালতের ডাকে সাড়া দেওয়া। বর্তমানে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও, তিনি যদি আদালতে গিয়ে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য প্রদান করেন, তাহলে আইনি জটিলতা কমে আসবে।
এটি শুধুমাত্র মালাইকার জন্য নয়, বরং সমাজের প্রতিটি মানুষের জন্য একটি বার্তা—আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি।
NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।