বিষয়বস্তু
বলিউডের ইতিহাসে এমন বহু ঘটনা আছে যা আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। তারকাদের জীবনের নানা অজানা অধ্যায় মাঝে মাঝে সামনে আসে এবং সেগুলো আমাদের অবাক করে তোলে। আজ এমনই এক অসাধারণ ঘটনার কথা জানব, যেখানে বলিউড অভিনেত্রী মণীষা কৈরালা একজন কিংবদন্তি নায়িকার দেখা পাওয়ার জন্য এমন এক কাজ করেছিলেন যা সত্যিই অনন্য।
সুচিত্রা সেন: এক জীবন্ত কিংবদন্তি
সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্রের এমন এক নাম, যিনি শুধুমাত্র অভিনয় দিয়ে নয়, নিজের ব্যক্তিত্ব, গাম্ভীর্য এবং অন্তর্মুখী স্বভাবের জন্যও ইতিহাস গড়েছেন। তাঁকে এক নজর দেখতে বহু মানুষের আগ্রহ থাকত, কিন্তু তিনি কখনওই সহজে কারও সঙ্গে দেখা করতেন না। হেমা মালিনী থেকে শুরু করে মাধুরী দীক্ষিতের মতো বলিউড তারকারাও সুচিত্রার সঙ্গে দেখা করার জন্য নানা চেষ্টা করেছেন। কেউ সফল হয়েছেন, কেউ হননি। তবে এই তালিকায় একজন বলিউড নায়িকার কাণ্ড পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল।
‘ইলু ইলু’ গার্লের স্বপ্ন: মণীষা কৈরালার একচোখা ভক্তি
১৯৯০-এর দশকে বলিউডে পা রাখা অভিনেত্রী মণীষা কৈরালা তখন সবে ক্যারিয়ারের শুরুতে। কিন্তু নিজের অভিনয় ও সৌন্দর্য দিয়ে খুব দ্রুত দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই মণীষার মনে এক তীব্র ইচ্ছা—কীভাবে তিনি তার স্বপ্নের নায়িকা সুচিত্রা সেনের সঙ্গে একবার দেখা করবেন।
কলকাতা সফর এবং গোপন অভিযান
ভারতীয় গণমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, একবার মণীষা কৈরালা কলকাতায় একটি সিনেমার শুটিংয়ের কাজে আসেন। তখন কাউকে কিছু না জানিয়ে একা একাই পৌঁছে যান সুচিত্রা সেনের বাড়িতে। উদ্দেশ্য একটাই—যদি দেখা পাওয়া যায়। তবে দুর্ভাগ্যবশত, তাকে সেদিন বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু এখানেই থেমে যাননি মণীষা। তিনি বুঝেছিলেন, এই কাজ সহজ নয়, কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
লেখক সুমন গুপ্তর বইয়ে লুকানো গল্প
বিখ্যাত লেখক সুমন গুপ্ত তার বই ‘যে জন আছেন নির্জনে’-তে মণীষার এই গল্পটি তুলে ধরেন। বইটিতে তিনি জানান, মণীষা একদিন সুচিত্রা সেনের মেয়ে, অভিনেত্রী মুনমুন সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মুনমুন তখন সরাসরি জানিয়ে দেন যে তাঁর মা কারও সঙ্গে বাড়িতে দেখা করেন না। তবে তিনি একটি দারুণ পরামর্শ দেন—সুচিত্রা প্রতিদিন বিকেলে তাঁর আইনজীবীর বাড়িতে যান, সেখানকার লিফটে যদি ধরে ফেলা যায়, তবে দেখা হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
লিফটে ধরা সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত
মুনমুনের কথা শুনে মণীষা আর দেরি করেননি। পরদিন বিকেলেই সুচিত্রার বাড়ির নিচে হাজির হয়ে যান। সময়মতো সুচিত্রা যখন লিফটে উঠছেন, তখন হঠাৎ করেই মণীষা সেই লিফটে ঢুকে পড়েন। স্বপ্নের মানুষকে একেবারে সামনে পেয়ে নিজের আবেগ আর ধরে রাখতে পারেননি।
তিনি সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন, সুচিত্রার পা ধরে বলেন,
“ম্যাডাম, আমি আপনার খুব বড় ফ্যান। আমি হিন্দি ছবিতে একটু আধটু অভিনয় করি। কয়েক দিন ধরে চেষ্টা করছি আপনার সঙ্গে দেখা করার। আপনি আমায় আশীর্বাদ করুন।”
এই দৃশ্য দেখে কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন প্রথমে হতবাক হয়ে যান। তিনি চুপ করে তাকিয়ে থাকেন মণীষার দিকে। তখনকার সেই মুহূর্ত যেন কোনও সিনেমার দৃশ্যের চেয়েও বেশি আবেগঘন ছিল।
সুচিত্রার প্রতিক্রিয়া
সেই ঘটনার পর মুনমুন সেনকে সুচিত্রা বলেন,
“মেয়েটা সামনে থেকে দেখতে খুব মিষ্টি। ওকে আমার ভালো লেগেছে।”
এই কথা থেকেই বোঝা যায়, মণীষার সৎ ইচ্ছা এবং ভালোবাসা কিংবদন্তি অভিনেত্রীর হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল।
একটি চিরকাল মনে রাখার মতো গল্প
মণীষা কৈরালার এই ঘটনা প্রমাণ করে দেয়, সত্যিকারের ভালোবাসা ও সম্মান কখনও চাপা পড়ে না। যখন কোনো তারকা আরেকজন কিংবদন্তিকে এভাবে সম্মান জানান, তখন তা শুধু ভক্তি নয়, বরং এক শিল্পীর প্রতি অন্য শিল্পীর আন্তরিক শ্রদ্ধা।
আজকের প্রজন্মের জন্য বার্তা
এই ঘটনা আমাদের শেখায়—স্বপ্ন দেখার সাহস রাখতে হয়। অনেক সময় সেই স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়, তবে আন্তরিকতা থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।