ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে গৃহকর্মী নির্যাতনের। অভিযোগকারী পিংকি আক্তার নামের এক নারী জানিয়েছেন, মেয়ের খাবার খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে তাকে মারধর করেছেন নায়িকা পরীমনি। শুধু তাই নয়, অভিযোগে রয়েছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য—মেকআপ রুম থেকে বের হয়ে মাদকের প্রভাবে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ এবং শারীরিক নির্যাতনেরও অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে আগামী ৮ মে’র মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেন।
ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনায় যা জানা গেছে
নেত্রকোণা জেলার ফাদুলিয়া গ্রামের মেয়ে পিংকি আক্তার, ২০২৪ সালের মার্চে ‘কাদের এজেন্সি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গৃহপরিচারিকার কাজ নেন পরীমনির বাসায়। দায়িত্ব ছিল একটি শিশুকে দেখাশোনা করা এবং রান্নাবান্না। কিন্তু বাস্তবে তাকে দুই শিশুর দায়িত্ব নিতে হয়। রান্নার দায়িত্বও চলে তার ঘাড়ে, দিনে ও রাতে। এসব কষ্ট সত্ত্বেও পিংকি তার কাজ সুনামের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে দাবি করেন।
২০২৫ সালের ২ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে ঘটনার সূত্রপাত। অভিযোগ মতে, পরীমনি তার মেকআপ রুমে বসে মাদক গ্রহণ করে শিশুর রুমে এসে পিংকিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। শিশুকে কেন দুধ খাওয়ানো হচ্ছে—এই বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়।
পিংকির জবানবন্দি: “আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম!”
পিংকির ভাষ্যমতে, পরীমনি এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে মাথা, মুখ ও চোখে আঘাত করেন। অতিরিক্ত মারধরে পিংকি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর নিরাপত্তাহীনতায় কাঁপতে কাঁপতে পরীমনিকে অনুরোধ করেন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তখন ফ্ল্যাটে থাকা সৌরভ তাকে নির্যাতনের জন্য উসকানি দেন এবং বাসার বাইরে যেতে বাধা দেন।
শেষমেশ পিংকি ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সহযোগিতায় বাসা থেকে বের হয়ে যান এবং ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এরপর ৪ এপ্রিল তিনি ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো অগ্রগতি না থাকায় তিনি সরাসরি আদালতে মামলা দায়ের করেন।
আসামিরা কী বলছেন?
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন পরীমনিও। যদিও তার বক্তব্য এখনো আদালতে প্রমাণিত হয়নি। সামাজিক মাধ্যমে তিনি বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে একটা পক্ষ সবসময় ষড়যন্ত্র করে। সবকিছুর পেছনে রাজনীতি আছে।”
তবে ভুক্তভোগীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাসিদুস জামান নিশান বলেন, “এই মামলার পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই, একজন নারী যে অন্য নারীকে কীভাবে নির্যাতন করতে পারে—এই বিষয়টি সমাজের সামনে তুলে ধরার জন্যই মামলাটি করা হয়েছে।”
বাংলাদেশে গৃহকর্মী নির্যাতন: একটি চলমান সংকট
পরীমনির মতো জনপ্রিয় একজন তারকার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শুধু বিনোদন অঙ্গনেই নয়, সামাজিক স্তরেও তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গৃহকর্মীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। তবে বিষয়টি আলোচনায় আসে যখন অভিযুক্ত কেউ পরিচিত মুখ হন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গৃহকর্মীদের সুরক্ষায় আরও কার্যকর আইন প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন দরকার। সামাজিক সচেতনতা এবং নিয়োগকর্তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে না পারলে এ ধরণের ঘটনা থামবে না।
মামলা এখন কোন পর্যায়ে?
মামলাটি এখন তদন্তাধীন। পিবিআই আগামী ৮ মে’র মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে। তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হলে পরীমনির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলবে এবং আইন অনুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।