NG Videos News

Entertainment Unlimited

শনিবার ৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
গ্যাল গ্যাদত

বিশ্ববিখ্যাত ডিজনি প্রযোজিত নতুন লাইভ-অ্যাকশন সিনেমা ‘স্নো হোয়াইট’ (Snow White) বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেলেও লেবাননে দেখা যাবে না এটি। কারণ? সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইসরায়েলি অভিনেত্রী গ্যাল গ্যাদত (Gal Gadot)। শুধু এটুকুতেই শেষ নয়, এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, ইতিহাস এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়ার জটিলতা।

লেবাননের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ আল-হাজ্জার সরাসরি সিনেমাটির মুক্তি নিষিদ্ধ করেছেন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি সামরিক হামলা, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা এবং গ্যাল গ্যাদতের অতীত অবস্থান।

গ্যাল গ্যাদত: একজন অভিনেত্রী, একজন সাবেক সেনাসদস্য

গ্যাল গ্যাদত শুধুমাত্র একজন জনপ্রিয় হলিউড অভিনেত্রীই নন, তিনি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) সাবেক সদস্যও। তার প্রতি সমর্থন এবং নানা সময়ে ইসরায়েলের সামরিক কার্যকলাপের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন প্রদানের কারণে তিনি লেবাননের চোখে একজন বিতর্কিত চরিত্রে পরিণত হয়েছেন।

লেবাননের মিডিয়া সেন্সর বোর্ড এবং ‘ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া মনিটরিং অথরিটি’ সিনেমাটি নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করে সরকারের কাছে। তারা জানায়, গ্যাল গ্যাদতের অতীত কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক অবস্থান লেবাননের নাগরিকদের অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে।

ইসরায়েল বয়কট তালিকায় গ্যাল গ্যাদত

এই সিদ্ধান্ত আকস্মিক নয়। লেবাননে গ্যাল গ্যাদতের অভিনীত কোনো সিনেমা আগে কখনো মুক্তি পায়নি। ‘Wonder Woman’ কিংবা ‘Fast & Furious’ সিরিজের গ্যাদত অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোও লেবাননে নিষিদ্ধ ছিল।

বৈরুতভিত্তিক মিডল ইস্ট ডিস্ট্রিবিউশন সংস্থা ‘ইতালিয়ান ফিল্মস’ জানায়, গ্যাল গ্যাদত লেবাননের ‘ইসরায়েল বয়কট তালিকা’-তে অন্তর্ভুক্ত থাকায়, তার উপস্থিতি থাকা যেকোনো সিনেমাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

সিনেমা বিতর্কিত শুধু অভিনেত্রীর জন্যই নয়

‘স্নো হোয়াইট’ সিনেমাটি শুধু গ্যাল গ্যাদতের কারণে নয়, বরং তার কাস্টিং এবং গল্প নিয়েও তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বব্যাপী। মূল রূপকথার কাহিনিতে বলা হয়, স্নো হোয়াইট হবে ‘বরফের মতো সাদা’। এ থেকেই চরিত্রের গায়ের রঙ ও জাতিগত পরিচয়ের ব্যাপারে দর্শকের একটি ঐতিহ্যগত ধারণা তৈরি হয়েছিল।

ডিজনি যখন ঘোষণা দেয় যে নতুন স্নো হোয়াইট হবেন ল্যাটিনা অভিনেত্রী রেচেল জেগলার, তখন থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। অনেকে বলেন, এটি মূল গল্পের অপমান। আবার কেউ বলেন, এটি ইনক্লুসিভিটির (Inclusivity) একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

রূপকথার অতীত থেকে বর্তমান

‘স্নো হোয়াইট’ চরিত্রটি প্রথম বিশ্ববাসীর সামনে আসে ১৯০২ সালে, একটি নির্বাক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এরপর নানা সংস্করণে, অ্যানিমেশনে, কার্টুনে এবং শিশুদের গল্পে রূপকথার এই চরিত্র পৃথিবীজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ডিজনি ১৯৩৭ সালে প্রথম অ্যানিমেটেড ‘স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফস’ মুক্তি দেয়। সেটি বিশ্বব্যাপী বক্স অফিসে ব্যাপক সাফল্য পায় এবং আজও সেই সিনেমা ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত।

মুক্তি পেলেও সাড়া কম

ডিজনির নতুন এই রূপান্তর ‘স্নো হোয়াইট’ ২১ মার্চ ২০২৫-এ মুক্তি পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে। তবে দর্শক প্রতিক্রিয়া মিশ্র। অনেকে সিনেমার ভিজ্যুয়াল এবং অভিনয় প্রশংসা করলেও, অনেকে আবার চরিত্র ও সংলাপ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের কিছু দেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে এই সিনেমার প্রচারে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।

ডিজনির দ্বিধা ও কৌশল

সমালোচনার প্রেক্ষাপটে ডিজনি শুরুতেই সিনেমাটির প্রিমিয়ার ইভেন্ট সীমিত করে দেয়। কোনো বড় আয়োজন কিংবা আন্তর্জাতিক সফরের আয়োজন না করেই তারা চেষ্টা করে বিতর্ক এড়িয়ে যেতে। তবে লেবাননের মতো দেশে নিষেধাজ্ঞা কোনোভাবেই এড়ানো যায়নি।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

লেবাননের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ কেউ সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, কেউ আবার প্রশ্ন তুলেছেন, শিল্প ও সংস্কৃতির জায়গায় রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কতটা যৌক্তিক।

ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামে লেবাননের তরুণ প্রজন্মের অনেকে গ্যাল গ্যাদতের অতীত অবস্থানকে সমালোচনার মুখে ফেলেছেন, আবার অনেকে বলছেন, রাজনীতি আর সিনেমা আলাদা রাখা উচিত।


উপসংহার

ডিজনির ‘স্নো হোয়াইট’ সিনেমাটি যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিশুদের আনন্দ দিচ্ছে, সেখানে লেবাননের মতো একটি দেশে এটি দেখাই যাচ্ছে না একজন অভিনেত্রীর অতীত অবস্থান এবং রাজনৈতিক প্রসঙ্গের কারণে। গ্যাল গ্যাদত যে শুধু একজন অভিনেত্রী নন, বরং একজন প্রতীক হয়ে উঠেছেন—তা আরও একবার প্রমাণ হলো এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে।

NG Videos news এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।